শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১১ অপরাহ্ন
“ভাঙ্গছে নদী, পুড়ছে কপাল, কাদঁছে অসাহমানুষ”
সুমন খান, বানারীপাড়া ॥
সন্ধ্যা কোন এলোকেশী তরুনীর নাম নয়। সন্ধ্যা একটি রাক্ষুষী নদীর নাম যার গর্ভে ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে বানারীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ন জনপদ। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলী জমি হারিয়ে নিঃম্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শতশত পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর জীবন। বানারীপাড়ায় অনিয়মতান্ত্রিক ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর ভাঙ্গন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। বালু উত্তোলনের কারনে ভাঙ্গছে নদী, পুড়ছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ। আর কপাল খুলে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল। বানারীপাড়া উপজেলায় সন্ধ্যা নদীত মোট ৮টি বালু মহল ইজারার পয়েন্ট রয়েছে। নদীর ভাঙ্গন রোধে বালু উত্তোলণ বন্ধে উপজেলার ইলুহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পরিমল জনস্বার্থে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে (উচ্চ অদালতে ) রিট পিটিশন দায়ের করলে বরিশাল জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে নদীর ভাঙ্গন রোধে কেন বালু মহাল ইজারা দেওয়া বন্ধ করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়। হাইকোর্টের রিটের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বরিশালের অপর উপজেলা গুলোর সন্ধ্যা সহ বিভিন্ন নদীতে বালু মহাল ইজারা দেওয়া হলেও বানারীপাড়া উপজেলায় বালু মহাল ইজারা স্থগিত রাখা হয়। এতে বালু দস্যুদের ক্ষতির চেয়ে লাভ বেশী হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে মাসোয়ারার মাধ্যমে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলণ অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বালু দস্যুরা রাক্ষুসে সন্ধ্যা নদীর বুককে ক্ষত-বিক্ষত করে রাত-দিন ১০/১২টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। আর এর সবকিছু নিয়ন্ত্রন করছেন আওয়ামীলীগের এক শীর্ষ নেতা। এদিকে অনিয়মান্ত্রিকভাবে যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে নদী শাসন বিষেষজ্ঞরা জানান নদীর যে স্থানে ভাঙ্গন তীব্ররূপ ধারন করছে সেই স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে নদীর গভীরতা আরও বৃদ্ধি পেয়ে আশপাশের এলাকাও ভাঙ্গন’র কবলে পতিত হয়। বালু দস্যুদের কারনে ইতিমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিন নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাক্ষ¥নকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার,চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েক শত একর ফসলি জমি,অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা,মসজিদ ও মন্দির সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। উপজেলার ইলুহার বিহারীলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়,মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম। ভাঙ্গনের কারনে বসত ঘর, ভিটামাটি ও ফসলি জমি সহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব ও রিক্ত হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উল্লেখিত মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রাম গুলো বাস্তবে নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে পূনরায় নতুন করে ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার ও শিক্ষা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।শুধু আওয়ামীলীগ সরকার আমলে নয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বালুদস্যুরা ছিলেন আরও বেপরোয়া ওই সময়ই মূলত গ্রামগুলো নদী গ্রাস করে ফেলে। এর ধারাবাহিকতায় এখনও ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।এদিকে ২০১২ সালে তৎকালীণ আওয়ামীলীগ দলীয় স্থাণীয় সংসদ সদস্য মোঃ মনিরুল ইসলাম মনি এলাকাবাসীর স্বার্থে নদীর ভাঙ্গন রোধে বালূ মহাল ইজারা না দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছিলেন। ফলে বালু উত্তোলণ বন্ধ থাকায় ওই সময় নদী ভাঙ্গন অনেকটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এলাকাবাসী অবৈধ বালু উত্তোলণ বন্ধ সহ এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করার দাবী জানিয়েছেন।
Leave a Reply